আয়নীকরণ শক্তি, ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋনাত্মকতার ওপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - রসায়ন - রসায়ন- প্রথম পত্র | | NCTB BOOK
3

আয়নিকরণ শক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব 

আয়নিকরণ শক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের যেমন- পরমাণুর আকার, উপশক্তিস্তর, ইলেকট্রন বিন্যাস ইত্যাদির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

নিয়ে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো :

(১) পরমাণুর আকার (Size of Atom) পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে প্রয়োজনীয় শক্তিই হলো

আয়নিকরণ শক্তি। পরমাণুর যোজনী ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে ধরে রাখে ইলেকট্রনের বিপরীত চার্জযুক্ত প্রোটন, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত। তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াস হতে যোজনী ইলেকট্রনের দূরত্ব যত কম হবে ঐ ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ তত বেশি হবে ফলে উহার যোজনী ইলেকট্রন অপসারণে বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে অর্থাৎ, আয়নিকরণ শক্তির মান বেশি। হবে। সুতরাং পরমাণুর আকার যত বেশি হবে আয়নিকরণ শক্তির মান ততই কম হবে। পর্যায় সারণির। শ্রেণিতে উপর থেকে যতই নিচে যাওয়া যায় ততই পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলসমূহের আয়নিকরণ শক্তির মান হ্রাস ঘটে।

(২) শক্তিস্তর (Energy Level) : নিউক্লিয়াস হতে কত দূরত্বে ইলেকট্রন অবস্থান করছে তা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান থেকে

জানা যায়। অধিকন্তু ইলেকট্রনের অরবিটাল থেকেও জানা যায় যে, ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের সাথে শক্তিশালী না দুর্বল আকর্ষণ দ্বারা

যুক্ত। যদি n-এর মান বড় হয় তবে নিউক্লিয়াস থেকে ইলেকট্রন অনেক দূরে অবস্থান করে ফলে ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের

আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং ইলেকট্রন সহজেই অপসারিত হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে আয়নিকরণ শক্তির মান কম হয়।

 

 

ইলেকট্রন আসক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব
ইলেকট্রন আসক্তির উপর যেসব নিয়ামক প্রভাব বিস্তার করে যেগুলো হলো (1) পরমাণুর আকার (ii) নিউক্লিয়ার চার্জ (iii)

ইলেকট্রন বিন্যাস। নিম্নে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো : (১) পরমাণুর আকার (Size of Atom) ইলেকট্রনকে কোনো পরমাণুর নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাকে তার ইলেকট্রন আসক্তি বলে। সাধারণভাবে, পরমাণুর আকার বৃদ্ধিতে ইলেকট্রন আসক্তির মান হ্রাস পায়। পরমাণুর আকার যতই বৃদ্ধি পায় ততই নিউক্লিয়াস হতে পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তর দূরে সরে যায় এবং আগমনকারী ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হ্রাস পায় ফলে ইলেকট্রন আসক্তির মান কম হয়। যেমন- পর্যায় সারণির গ্রুপ-17 শ্রেণির মৌলসমূহের Fio এর ইলেকট্রন আসক্তির মান 3-6 ev অথচ (13) এর ইলেকট্রন আসক্তির মান 3-2 V

ক্লোরিন পরমাণুর আকারের চেয়ে আয়োডিন পরমাণুর আকার অনেক বড় বলে F এর তুলনায় এর ইলেকট্রন আসক্তির মান কম।

চিন্তা করুন ক্লোরিন পরমাণুর আকার ফ্লোরিন পরমাণু অপেক্ষা বড় হলেও ফ্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তির মান ক্লোরিনের ইলেকট্রন আসক্তির মান অপেক্ষা কম কেন?

(২) পরমাণুর উপস্তর (Subshell of Atom) উপরের আলোচনা হতে এটি পরিষ্কার যে, মৌলসমূহের ইলেকট্রন আসক্তি

পরমাণুর আকারের উপর নির্ভরশীল। পরমাণুর আকারের পাশাপাশি আরও একটি নিয়ামক হলো ইলেকট্রনের উপশক্তি স্তর। ইলেকট্রনের এসব উপত্তর হলো s, p. d এবং f-অরবিটাল। ১- অরবিটালের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি এরপর পর্যায়ক্রমে p. d এবং f- অরবিটালে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে। তাই s অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন আসক্তির মান সবচেয়ে বেশি হবে এবং এরপর p. d এবং f অরবিটালে তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাবে। অর্ধপূর্ণ এবং পূর্ণ অরবিটালের স্থিতিশীলতা অপূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ অরবিটাল অপেক্ষা অনেক বেশি। যেসব মৌলের যোজনী স্তর

অর্ধপূর্ণ বা পূর্ণ থাকে যেসব মৌলের ইলেকট্রন আসক্তির মান যোজনী স্তর ইলেকট্রন কর্তৃক আংশিক পূর্ণ থাকলে সেসব মৌলের

ইলেকট্রন আসক্তির মান অপেক্ষা কম।

 

তড়িৎ ঋণাত্মকতার উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব


সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুষয়ের শেয়ারকৃত ইলেকট্রন একটি পরমাণু কর্তৃক নিজের দিকে টেনে নেওয়ার তুলনামূলক

ক্ষমতাকে ঐ পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে। মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা যেসব নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয় তা হলো- (i) পরমাণুর আকার (ii) উপস্তর এবং (iii) ইলেকট্রন। বিন্যাস। নিম্নে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো

(i) পরমাণুর আকার (Size of Atom) :

পরমাণুর আকার বৃদ্ধিতে পরমাণুর নিউক্লিয়াস হতে সর্বশেষ শক্তিস্তর দূরে সরে যায় তাই বন্ধনে অংশগ্রহণকারী শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়ের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা হ্রাস পায়। গ্রুপ-17 এর মৌলসমূহের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান নিম্নে দেওয়া হলো :

F = 40, C1=3-0; Br = 2-8 1 = 2.5; At = 2.2

(১) নিউক্লিয়ার চার্জ (Nuclear Charge) : পরমাণুর নিউক্লিয়ার চার্জ বৃদ্ধির সাথে মৌলের ইলেকট্রোনেগেটিভিটি সম্পর্কিত। নিউক্লিয়ার চার্জ যত বেশি হবে ঐ নিউক্লিয়ার কর্তৃক সর্বশেষ স্তরের ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ তত বেশি প্রবল হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলসমূহের Li(3) হতে F(7) পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে নিউক্লিয়াসে একটি করে প্রোটন যুক্ত হয় এবং শেষ শক্তিস্তরে একটি করে ইলেকট্রন যুক্ত হয় অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধিতে নিউক্লিয়ার চার্জ বৃদ্ধি পায় এবং মৌলের তড়িৎ কণাত্মকতার মানও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Promotion